প্রচ্ছদ সফল নারী সাংবাদিকতার অহংকার রোকেয়া হায়দার

সাংবাদিকতার অহংকার রোকেয়া হায়দার

0
নিহার সিদ্দিকী: ১২ জুন ভয়েস অব আমেরিকা বাংলা বিভাগের প্রধান , জনপ্রিয় বেতার-মাল্টিমিডিয়া সাংবাদিক নারী সাংবাদিকতার অহংকার রোকেয়া হায়দারের জন্মদিন। ‘বাংলাদেশের সাংবাদিকতায় রোকেয়া হায়দার নিজেকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন। তিনি আজ নারী সাংবাদিকতার অহংকার। অনেক প্রতিকূলতা মোকাবিলা করেও তিনি সাহস হারাননি। আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে এগিয়ে গেছেন। নিজের মেধা, যোগ্যতা ও পেশার প্রতি দায়িত্বশীল ছিলেন বলেই তিনি সফলতা পেয়েছেন । শাড়ি পরে সাংবাদিকতা করা যায় যার একমাত্র উদাহরণ রোকেয়া হায়দার। তাই আজ তিনি ভয়েস অব আমেরিকার মতো আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের বাংলা বিভাগের প্রধান সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।’রোকেয়া হায়দারের জন্ম যশোরের মেয়ে হলেও বাবার কর্মসুত্রে তাঁর জন্ম ও বেড়ে ওঠা কোলকাতায়। বাবা আবুবকর ফারাজী ও মা মেহেরুন্নেসা বাকার ছয় সন্তানের ভেতর তিনি হলেন তৃতীয়। বড় বোন সুফিয়া আমিন এক সময় প্রখ্যাত নজরুল সংগীত শিল্পী ছিলেন। কোলকাতার সেন্ট জন্স বিদ্যালয়ের মাধ্যমে শিক্ষাজীবন শুরু । পরে ইডেন কলেজে পড়েন ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাস্ট্রবিজ্ঞানে মাস্টার্স করেন। তারপর ষাটের দশকে স্বামী হায়াদার তাকির কর্মসুত্রে চলে যেতে হয় চট্টগ্রাম। রোকেয়া হায়দারের বেতার জীবনের শুরু কোলকাতায় নানার হাত ধরে শিশুমহলে মাইক্রোফোনের সাথে মিতালী, স্কুল কলেজে পড়াশুনোর ফাঁকে ফাঁকে বেতারে নাটক ও অনুস্ঠান উপস্থাপনা দিয়ে। ১৯৬০ এর দশকেই চট্রগ্রাম বেতারে নিয়মিত অনুষ্ঠান ঘোষিকা হিসেবে কাজ করেন।১৯৬৮ সালে চট্টগ্রাম বেতারে আন্চলিক সংবাদ পাঠ দিয়ে শুরু হয় তাঁর সংবাদ উপস্থাপনার জীবন। তবে পেশাদার সাংবাদিকতার শুরু ৭৪ সালে ঢাকা বেতার ও টিভির নিয়মিত খবর পড়া দিয়ে। স্পস্ট উচ্চারণ , বলিষ্ঠ কন্ঠস্বর ও আত্মপ্রত্যয়ী মনোভাবের কারনে স্বল্পকালের মধ্যেই রোকেয়া হায়দার খ্যাতির শীর্ষ্ পৌঁছে যান। বাংলাদেশে যখন টিভি আসেনি তখন সবার কাছে ভয়েস অব আমেরিকা বেতারের অনুষ্ঠান ছিলো দারুন জনপ্রিয়।১৯৮১ সালে বিশ্বখ্যাত ভয়েস অব আমেরিকার আমন্ত্রণে চলে আসেন ওয়াশিংটন ডিসিতে। পুরো খবর পড়াই নয় পুরোদস্তর সাংবাদিকতার দায়িত্ব নিতে হয় তাঁকে। রোকেয়া হায়দার ভিওএ বাংলা বিভাগের ম্যানেজিং এডিটরের দায়িত্ব লাভ করেন। ২০১১ সালের জুন মাস থেকে রোকেয়া হায়দার বিভাগীয় প্রধানের দায়িত্ব পালন করে আসছেন। এখানে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য যে কোন আন্তর্জাতিক মাল্টিমিডিয়া প্রতিষ্ঠানের বাংলা বিভাগে তিনিই প্রথম মহিলা প্রধান।
সাংবাদিকতার কর্মব্যস্ততার মাঝেও রোকেয়া হায়দার বিভিন্ন সমাজসেবামুলক কাজের সাথে জড়িত। যার স্বীকৃতিতে ১৯৯০ সালে যুক্তরাস্ট্রের প্রেসিডেন্সিয়াল ভলান্টিয়ার এওয়ার্ড পেয়েছেন প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশের কাছ থেকে। তাঁর নিজের সাংবাদিকতা জীবনে মাদার টেরেসার সাক্ষাত্কার, বিশ্বকাপ ফুটবল ও অলিম্পিকের খবর সরাসরি মাঠ থেকে সংগ্রহ ও সরবরাহ , দক্ষিন এশিয়ার শিশু শ্রমের বিরুদ্ধে অভিযানের খবরাখবর, বাংলাদেশে এসিড নিক্ষেপের মর্মান্তিক ঘটনা সহ বিভিন্ন বিষয়ে অপুর্ব সব অনুস্ঠানের জন্য ভয়েস অব আমেরিকার প্রোগ্রাম এ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন।পেশা জীবনের পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন নানান সাংস্কৃতিক অনুস্ঠানের সাথেও তিনি জড়িত – আন্তর্জাতিক বাংলা উৎসব বইমেলা, রবীন্দ্র নজরুল সন্মেলন , ফোবানা, বাংলা স্কুল সব আয়োজনেই তাঁকে দেখা যায়। সম্প্রতি একটি সাক্ষাতকারে তিনি বলেছেন, আমি সংবাদ পাঠিকা, ভাষ্যকার ও সাংবাদিক। খবর পড়েছি, দেশ থেকে দেশান্তর ছুটেছি খবরের সন্ধানে, সব আনন্দ-অনুস্ঠান দারুন উপভোগ করেছি, যা হারিয়ে যাবেনা কখনো’।রোকেয়া হায়দার আরো বলেন, ‘সাংবাদিকতা একটি মহান পেশা। এখানে কাজের ক্ষেত্রে নারী-পুরুষ বলে কোনো বৈষম্য থাকতে পারে না। নিজের মেধা, যোগ্যতা ও পরিশ্রম দিয়েই এ পেশায় সবাইকে টিকে থাকতে হয়। আমাকেও সে লড়াই করতে হয়েছে। কখনো সাহস হারাইনি। সবার মতো অনেক চড়াই-উতরাই পাড়ি দিয়ে আজকের এই অবস্থানে আসতে পেরেছি।’
‘বাংলাদেশের নারী সাংবাদিকদের এখনো প্রতিকূলতার সঙ্গে লড়তে হচ্ছে। বৈষম্য মোকাবিলা করতে হচ্ছে। রোকেয়া হায়দার এই প্রতিকূলতা মোকাবিলা করেই সাফল্য পেয়েছেন। কারণ তিনি সাহস হারাননি। আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে এগিয়ে গেছেন। নিজের মেধা, যোগ্যতা ও পেশার প্রতি দায়িত্বশীল ছিলেন বলেই আজ এই সাফল্য এসেছে। আজ বাংলাদেশের গর্বিত এক নারী রোকেয়া হায়দার। তিনি নারী সাংবাদিকদের অহংকার ও প্রেরণা।  দীর্ঘ জীবন বেঁচে থাকুন তিনি বাংলা বাঙালি আর সাংবাদিকতার অহংকার হয়ে।