প্রচ্ছদ সফল নারী সফল নারী উদ্যোক্তা আরিফা আক্তার

সফল নারী উদ্যোক্তা আরিফা আক্তার

0
শওকত আলী রতন: স্কুলে পড়াকালীন সহপাঠীদের সাথে শখের বশে হাতের সাহায্যে বুননের কাজ শুরু করেছিলেন দোহার উপজেলার পদ্মা নদী-বেষ্টিত নারিশা এলাকার আরিফা আক্তার রানু। দিন দিন আস্থা বাড়তে থাকে এ কাজের প্রতি। তিনি স্বপ্ন দেখেন কিভাবে ক্ষুদ্র এ শিল্পের প্রসার ও সম্প্রসারণের মাধ্যমে দারিদ্র্যমুক্ত নারীসমাজ গঠন করা যায়। আর এ লক্ষ্যে তিনি বিরামহীনভাবে তার মেধাশক্তিকে কাজে লাগাতে থাকেন।
এ স্বপ্ন বাস্তবায়নের আগেই তার বিয়ে হয়ে যায়। কিন্তু থেমে থাকেনি তার লালিত স্বপ্ন। এ কাজে সার্বিকভাবে সহযোগিতার জন্য উদ্বুদ্ধ করেন তার স্বামী আবদুল জব্বার বেপারী। এ পরিপেক্ষিতে ২০১৩ সালে জুট ডাইভারসিফিকেশন প্রমোশন সেন্টার থেকে পাটের বহুমুখী ব্যবহারের ওপর প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে নতুন করে উদ্যোগী হন আরিফা আক্তার। পরে নিজ উদ্যোগে এ শিল্পের বিকাশের জন্য উপজেলার নদীভাঙনকবলিত এলাকাসহ প্রায় ১৫০ জন নারীকে হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ দিয়ে প্রশিক্ষিত করে তোলেন। বর্তমানে ১৫০ জন প্রত্যেকে নিজ নিজ ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন।
অন্য দিকে প্রশিক্ষিত নারীদের কাজে লাগিয়ে নিজ বাড়ির নীচতলায় পাট ও পুতির ব্যবহৃত নান্দনিক জিনিসপত্রের একটি শোরুম চালু করেন। দক্ষ ও নিপুণ হাতে তৈরি জিনিসপত্রের চাহিদা দিন দিন বাড়তে থাকে। বিভিন্ন জায়গা থেকে অর্ডার আসতে থাকে এবং চাহিদার জোগান দেন আরিফা আক্তার। বর্তমানে এগুলো তৈরির মাধ্যমে ভালোভাবেই দিনাতিপাত করছেন আরিফা আক্তার রানু। সেই সাথে সহকর্মীরা অনেকেই সচ্ছল জীবন যাপন করছেন।
বাণিজ্যিকভাবে পাটের বহুমুখী ব্যবহারে তিনি ব্যাপক ভিত্তিতে উৎপাদন শুরু করেছেন। বাড়িতে বসেই তিনি পাট ও পুতির তৈরি বিভিন্ন ধরনের ব্যাগ, ওয়ালম্যাট, পাপোস, ফুলদানিসহ ঘর সাজানোর বিভিন্ন উপকরণ তৈরি করে থাকেন। দক্ষ হাতকে কাজে লাগিয়ে পাট ও পুঁতির তৈরি ব্যবহার্য বিভিন্ন জিনিসপত্র তৈরি করে তার বাজারজাতের মাধ্যমে অল্পদিনেই সফলতার মুখ দেখেন। তার এই সফলতার খবর ছড়িয়ে পড়ে সারা দেশে। নারী উদ্যোক্ত হিসেবে স্বীকৃতিস্বরূপ প্রথম ২০১৩ সালে দোহার উপজেলার সেরা জয়ীতা হিসেবে পুরস্কার পান। পরের বছর ঢাকা জেলার জয়ীতা হিসেবে স্বীকৃতি পান। এ বছর মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে তিনি একাধারে ঢাকা বিভাগীয়, ঢাকা জেলা ও দোহার উপজেলার শ্রেষ্ঠ জয়ীতা হিসেবে স্বীকৃতি তার দখলে। স্বীকৃতি পাওয়ার পর নতুন করে এ কাজের প্রতি আরো উদ্যমী হয়ে কাজ করছেন এই নারী। পাটের ব্যবহৃত জিনিসপত্র সহজেই বাজারজাত করা যায়, সে লক্ষ্যে তিনি প্রতিনিয়ত কাজ করে যাচ্ছেন। এ ক্ষেত্রে তিনি সরকারের সিদ্ধান্তকে গুরুত্বারোপ করেন।
এ ব্যাপারে আরিফা আক্তার জানান, নারীরা আজো সমাজে অবহেলিত। কোনো কিছু করতে গেলেই বিভিন্ন মহল থেকে বাধা আসে। তিনি বলেন, ক্ষুদ্র শিল্পের মাধ্যমে আমাদের যেকোনো নারী ঘরে বসেই কাজ করে স্বাবলম্বী হতে পারেন। এতে লজ্জার কিছু নেই।
তিনি সরকারের কাছে দাবি জানান, যেসব নারী উদ্যোক্তা ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের সাথে জড়িত, তাদেরকে সরকারিভাবে সহায়তা করলে দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে এ শিল্প। বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের পাটপণ্যের অর্ডারগুলো নারী উদ্যোক্তাদের দিলে এ শিল্পের দ্রুত প্রসার ঘটবে বলে তিনি জানান। এ বিষয়ে দোহার উপজেলা কমিশনার ভূমি শামীম আরা নিপা বলেন, তার এ শিল্পটিকে টিকিয়ে রাখার জন্য প্রয়োজনীয় যা যা করা দরকার সরকারের পক্ষ থেকে এ জন্য আমরা যথাসম্ভব চেষ্টা চালিয়ে যাবো।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here