প্রচ্ছদ বাংলাদেশ বিজয়ের মাসে বিমানের বহরে যোগ হলো দ্বিতীয় ড্রিমলাইনার ‘হংস বলাকা’

বিজয়ের মাসে বিমানের বহরে যোগ হলো দ্বিতীয় ড্রিমলাইনার ‘হংস বলাকা’

0
ফারাজী আজমল হোসেন: বিজয়ের মাসে চালু হয়েছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বিশ্বের সর্বাধুনিক প্রযুক্তি সম্বলিত সম্পূর্ণ নতুন ২য় বোয়িং ৭৮৭-৮ ড্রিমলাইনার উড়োজাহাজ ‘হংস বলাকা’। গতকাল বিকাল সাড়ে চারটায় বিমানটি ঢাকায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে। এর মধ্যে দিয়ে বিমানবহরে উড়োজাহাজের সংখ্যা দাঁড়ালো ১৫টি।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, উড়োজাহাজ নির্মাতা প্রতিষ্ঠান বোয়িং ২৯ নভেম্বর মালিকানা হস্তান্তর করে। ৩০ নভেম্বর দুপুরে ঢাকার উদ্দেশে যাত্রা শুরু করে ‘হংস বলাকা’। বিজি-২১১২ ফ্লাইটটি যুক্তরাষ্ট্রের সিয়াটল শহরের পেনফিল্ড এয়ারপোর্ট থেকে টানা সাড়ে ১৫ ঘণ্টা উড়ে ঢাকায় আসে ‘হংস বলাকা’। এর আগে ১৯ আগস্ট বিমানের প্রথম ড্রিমলাইনার ‘আকাশবীণা’ ঢাকায় আসে।

বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও এএম মোসাদ্দিক আহমেদ বলেন, ড্রিমলাইনার যুক্ত হওয়ার মধ্য দিয়ে বিমান নতুন মাইলফলক স্পর্শ করেছে। দ্বিতীয় ড্রিমলাইনার যুক্ত হওয়ার পর লন্ডন, দাম্মাম ও ব্যাংকক রুটে এ উড়োজাহাজ দিয়ে ফ্লাইট পরিচালনা করা হবে। আগামী ১০ ডিসেম্বর থেকে ড্রিমলাইনার উড়োজাহাজ দিয়ে ঢাকা-লন্ডন রুটে সপ্তাহে ৬টি, ঢাকা-দাম্মাম রুটে সপ্তাহে ৪টি এবং ঢাকা-ব্যাংকক রুটে সপ্তাহে ৩টি ফ্লাইট পরিচালনা করা হবে। তিনি বলেন, যাত্রীদের নিরাপদ ও আরামদায়ক সেবা দিতে বিমান সচেষ্ট। অন্য এয়ারলাইন্সগুলোর সঙ্গে প্রতিযোগিতায় নতুন উড়োজাহাজ বিমানকে সহায়তা করবে।
বিমান পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান এয়ার মার্শাল (অব.) ইনামুল বারী বলেন, যাত্রীদের নিরাপদ ভ্রমণ ও বিমান পরিচালনায় দক্ষতা বৃদ্ধিতে ড্রিমলাইনার নতুন মাত্রা যোগ করেছে। টানা ১৬ ঘণ্টা উড়তে সক্ষম ড্রিমলাইনার চালাতে অন্যান্য বিমানের তুলনায় ২০ শতাংশ কম জ্বালানি লাগে।
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স ২০০৮ সালে মার্কিন বিমান নির্মাতা প্রতিষ্ঠান বোয়িং কোম্পানির ১০টি নতুন বিমান ক্রয়ের জন্য ২ দশমিক ১ বিলিয়ন ইউএস ডলারের চুক্তি করে। ইতোমধ্যে বহরে যুক্ত হয়েছে ৬টি বোয়িং ৭৭৭-৩০০ইআর, ২টি ৭৩৭-৮০০ এবং ২টি বোয়িং ৭৮৭-৮ ড্রিমলাইনার। চারটি ড্রিমলাইনারসহ সবগুলো উড়োজাহাজের নাম পছন্দ করেছেন প্রধানমন্ত্রী।
ড্রিমলাইনার উড়োজাহাজ ঘণ্টায় ৬৫০ কিলোমিটার বেগে উড়তে সক্ষম। বিমানটির ইঞ্জিন প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান জেনারেল ইলেক্ট্রিক (জিই)। উড়োজাহাজের শব্দ কমাতে ইঞ্জিনের সঙ্গে শেভরন প্রযুক্তি যুক্ত রয়েছে। বিমানটি নিয়ন্ত্রণ হবে ইলেক্ট্রিক ফ্লাইট সিস্টেমে। কম্পোজিট ম্যাটেরিয়াল দিয়ে তৈরি হওয়ায় এই বিমান ওজনে হালকা। ভূমি থেকে বিমানটির উচ্চতা ৫৬ ফুট। দুইটি পাখার আয়তন ১৯৭ ফুট।
ড্রিমলাইনারে আসন সংখ্যা ২৭১টি। এর মধ্যে বিজনেস ক্লাস ২৪টি আর ২৪৭টি ইকোনমি ক্লাস। বিজনেস ক্লাসের আসনগুলো বানিয়েছে অ্যাসটেলা। আর ইকোনমি ক্লাসের আসনগুলো হেইকোর বানানো। দীর্ঘ সময় ভ্রমণেও যাত্রীরা যেন ক্লান্তি অনুভব না করেন সেজন্য এর ভেতরে এয়ার কম্প্রেসার সিস্টেম অন্যান্য উড়োজাহাজের তুলনায় উন্নত। ডিমলাইনারের ইন-ফ্লাইট এন্টারটেইনমেন্ট (আইএফই) সেবা দিতে প্যানাসনিক এভিওনিকস করপোরেশনের সঙ্গে চুক্তি করেছে বিমান। প্রতিটি আসনের সামনে প্যানাসনিকের এলইডিএস-মনিটর রয়েছে। মনিটরে বিবিসি, সিএনএনসহ ৯টি টিভি চ্যানেল দেখা যাবে। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৪৩ হাজার ফুট উঁচু দিয়ে উড়ে যাওয়ার সময়ও ওয়াইফাই সুবিধা পাবেন যাত্রীরা। এছাড়া মোবাইল ফোনে রোমিং সুবিধা থাকলে আকাশে উড্ডয়নের সময় কল করতে পারবেন যাত্রীরা। এজন্য ২৫টি স্যাটেলাইটের সঙ্গে করা হয়েছে চুক্তি। উড়োজাহাজটি যে স্থানের ওপর দিয়ে যাবে, যাত্রীদের সামনে তখন স্ক্রিনে দেখা যাবে থ্রিডি ম্যাপ। একই সঙ্গে উঠে আসবে সেই স্থানের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি। ফ্লাইট শেষে দেশে ফেরার আগেই ড্রিমলাইনারের কোনো সমস্যা আছে কিনা তা জানতে পারবেন প্রকৌশলীরা। তাই ত্রুটি পেলে বিমানটি দেশে পৌঁছানোর আগেই প্রস্তুতি নিতে পারবেন তারা।
কৃতজ্ঞতায়: ইত্তেফাক