প্রচ্ছদ সফল নারী জীবনের মানে হতাশা নয় : টেইলর সুইফট

জীবনের মানে হতাশা নয় : টেইলর সুইফট

0

সাব্বিন হাসান: বিশ্বে সুইফট নামেই বেশি বিখ্যাত। পুরো নাম ‘টেইলর সুইফট’। জন্ম ১৩ ডিসেম্বর ১৯৮৯। জন্মস্থান মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভানিয়া অঙ্গরাজ্যে। বর্তমানে পপ গায়িকা সুইফটকে নিয়ে আলোড়ন যেন এড়ানোই যাচ্ছে না। সঙ্গীত দুনিয়ার শিরোনাম হতে তিনি যেন বরাবরই পারদর্শী। ক্যারিয়ারের তুঙ্গেই আছেন তিনি। আছেন আলোচনার শীর্ষে।

বাবার নাম স্কট সুইফট। যিনি পেশায় একজন শেয়ার ব্যবসায়ী। মায়ের নাম অ্যান্ড্রি। সুইফটের একটি ছোট ভাই আছে। নাম অস্টিন। সুইফট যখন চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্রী তখন জাতীয় পর্যায়ে কবিতা আবৃত্তিতে পুরস্কার অর্জন করেন। আবৃত্তি করা কবিতার শিরোনাম ছিল ‘মনস্টার ইন মাই ক্লোসেট’। সুইফট এনবিসির স্থানীয় স্যাটারডে নাইট লাইভের একজন সদস্য ছিলেন। এ ব্যাপারে ছোটদের কমেডি গ্রুপ থিয়েটার কিডস লাইভ দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়। তখনই তার হাস্যরসাত্মক চরিত্রাভিনেত্রীর প্রতিভা ফুটে ওঠে। কারাওকেতে সুইফটের কৃতিত্ব দেখে গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা ক্রিক ক্রেমার তার মাকে কান্ট্রি সঙ্গীতে সুইফটকে তালিম দিতে বলেন। এরপর কান্ট্রি সঙ্গীতে সুইফট অসামান্য নৈপুণ্য দেখায়। এরপর থেকেই সুইফট স্থানীয় বিভিন্ন অনুষ্ঠান ও সঙ্গীতের আসরে নিয়মিত কান্ট্রি সঙ্গীত গাইতেন। তার প্রথম আলোচিত সঙ্গীতানুষ্ঠান ছিল একটি মেলাতে।

সঙ্গীত জীবনের শুরুতে সুইফট এক কম্পিউটার মিস্ত্রির কাছে গিটারের কর্ড বাজানো শেখেন। এরপর তিনি তার প্রথম গান ‘লাকি ইউ’ রচনা করেন। স্কুলের প্রতি আগ্রহ না থাকলেও তিনি নিয়মিত গান লিখতেন। এ জন্য স্কুলের শিক্ষার্থীরা তার সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করবে এমনটা ভেবে সুইফট তাদের নিয়েও গান লিখতেন। কানাডিয়ান কান্ট্রি সঙ্গীতশিল্পী শানায়া টোয়েইন সুইফটকে সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত করেন। তার দাদি ছিলেন পেশাদার অপেরা শিল্পী। তবে সুইফটের আগ্রহ ক্রমাগত কান্ট্রি সঙ্গীতের দিকে ঝুঁকতে থাকে। খ্যাতিমান কান্ট্রি সঙ্গীতশিল্পী প্যাটসি ক্লাইনের বিশেষ ভক্ত ছিল সুইফট।

সুইফট ১১ বছর বয়সে তার কারাওকে দিয়ে গাওয়া সঙ্গীত প্রচারের উদ্দেশ্যে কোনো রেকর্ড কোম্পানির সঙ্গে চুক্তির প্রত্যাশায় প্রথম নাশভিলে যায়। শহরের সব কোম্পানিতেই তিনি তার গাওয়া গান জমা দেন। তবে তাকে সবাই ফিরিয়ে দেয়। অবশেষে পেনসিলভানিয়াতে ফেরার পর সুইফট ইউএস ওপেন টেনিস টুর্নামেন্টে গান গাওয়ার সুযোগ পান। এ অনুষ্ঠানে সুইফট জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন করেন। যা উপস্থিত শ্রোতাদের মুগ্ধ করে। ১২ বছর বয়সে সুইফট ১২ স্ট্রিংয়ের গিটারে গান গাওয়া শুরু করেন। সঙ্গে চলে গান লেখাও। বয়স যখন ১৪ তখন তার পরিবার নাশভিলের উপশহরে থাকার সিদ্ধান্ত নেয়।

নাশভিলে এসে সুইফট স্কট বার্কেটের নজরে আসেন। স্কট তার সদ্য প্রতিষ্ঠিত রেকর্ড কোম্পানি বিগ মেশিন রেকর্ডের সঙ্গে সুইফটকে চুক্তিবদ্ধ করে। ১৪ বছর বয়সে সুইফটকে সনি মিউজিক পাবলিশিং গ্রুপ ভাড়া করে। সুইফটই সবচেয়ে কম বয়সী যিনি সনি মিউজিকের এ সুযোগ পান। সিএমএ অ্যাওয়ার্ডে বর্ষসেরা গান নির্বাচিত হয় সুইফটের লেখা আলোচিত ‘বেটার ম্যান’ গানটি। তার লিটল বিগ টাউন অ্যালবামের এ গানটির মিউজিক ভিডিওটিও বেশ সাড়া ফেলে। গানটি ইউটিউবে দেখা হয় প্রায় সাড়ে চার কোটিবার। তবে টেইলর সরাসরি উপস্থিত থাকতে পারেননি অ্যাওয়ার্ড অনুষ্ঠানে। তার পক্ষে পুরস্কার গ্রহণ করেন কাছের বন্ধু কার্লি ক্লোস।

এখন সুইফট তার নতুন অ্যালবাম ‘রেপুটেশন’ নিয়ে আলোচনায় এসেছেন। রেপুটেশন সুইফটের স্টুডিও অ্যালবাম। এতে মোট ১৫টি গান আছে। নির্ধারিত সময়ের তিনদিন আগেই অবমুক্ত করা হয় রেপুটেশন। কেন এমন করলেন এ বিষয়ে কিছুই না জানিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মার্কিন এ গায়িকা লিখেছেন, তিনদিন আগেই রেপুটেশন চলে এল। পশ্চিমা গণমাধ্যমগুলোর প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানা যায়, মুক্তির আগেই সুইফটের গানগুলো চুরি করে অনলাইনে ছেড়ে দেয়া হয়। তাই তড়িঘড়ি করে অ্যালবামটি মুক্তি দিতে বাধ্য হন তিনি। কিন্তু এ নিয়ে তার তরফ থেকে এখনও কোনো সুনির্দিষ্ট বক্তব্য পাওয়া যায়নি। আপাতত ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট ও আইটিউনে প্রি-অর্ডারের ভিত্তিতে অ্যালবামের গানগুলো শোনা যাবে।

সুইফট খুবই সরল মনের মানুষ। যেমন ক্যানসারে আক্রান্তদের খবর জানলে তিনি নিজেই ফোন করে সাহস যোগান। নিজের ২৪তম জন্মদিনে এক লাখ ডলার দিয়েছেন আর্থিক সংকটে পড়া সঙ্গীতশিল্পীদের। ডু সামথিং ডট ওরগের তালিকায় একেবারে শীর্ষে উঠে আসে সুইফটের নাম। তার পরেই আছে ব্যান্ড দল ওয়ান ডিরেকশন। সুইফটের ‘লাভ স্টোরি’ গানটি কান্ট্রি এবং পপ সঙ্গীতের তালিকার বিশ্বজুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি করে। মুক্তির সাত দিনেই ইন্টারনেটে ১ লাখ ২৯ হাজার কপি বিক্রি হয় গানের অ্যালবামটি। অনলাইনে কান্ট্রি সঙ্গীতের অ্যালবামের মধ্যে এটি রেকর্ড সৃষ্টি করে।

বিশ্ব সঙ্গীত অঙ্গনে ঝড় তুলতে টেইলর সুইফটের নামই যথেষ্ট। সুইফট মানেই নতুন কিছু, নতুন উন্মাদনা আর অনলাইনে রেকর্ড গড়ার মহড়া। ভক্তদের কাছে যেমন জনপ্রিয়, তেমনি সঙ্গীতশিল্পীদের সমস্যার পাশে দাঁড়াতেও পিছু পা হন না তিনি। ক্যানসার আক্রান্তদের জন্য সুইফটের আছে অসীম মমতা। সুযোগ পেলেই তিনি কোনো না কোনো ক্যানসার আক্রান্তের সঙ্গে আলাপ করেন। তারুণ্যের প্রতিভাকে তিনি শ্রদ্ধা আর সম্মানের সঙ্গে দেখেন। জীবনের মানে হতাশা নয়, অন্যের জন্য কিছু করা এটাই যেন সুইফটের বিশ্বাস।
কৃতজ্ঞতায়: যুগান্তর