প্রচ্ছদ ফিচার করোনা আতঙ্ক দেশে দেশে – মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র

করোনা আতঙ্ক দেশে দেশে – মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র

0
আনোয়ার শাহজাহান:  মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মূল ভূখণ্ডটি পশ্চিমে প্রশান্ত ও পূর্বে আটলান্টিক মহাসাগরদ্বয়ের মধ্যস্থলে অবস্থিত। এই অঞ্চলের উত্তর ও দক্ষিণ সীমান্তে অবস্থিত যথাক্রমে কানাডা ও মেক্সিকো রাষ্ট্রদ্বয়। আলাস্কা রাজ্যটি অবস্থিউঅত মহাদেশের উত্তর-পশ্চিমে; এই রাজ্যের পূর্ব সীমান্তে রয়েছে কানাডা ও পশ্চিমে বেরিং প্রণালী পেরিয়ে রয়েছে রাশিয়া। হাওয়াই রাজ্যটি মধ্য-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে অবস্থিত একটি দ্বীপপুঞ্জ। এছাড়াও ক্যারিবীয় সাগর ও প্রশান্ত মহাসাগরের অনেক অঞ্চল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অধিকারভুক্ত।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মোট আয়তন ৯৮,২৬,৬৭৫ বর্গকিলোমিটার (৩৭,৯৪,১০০ বর্গমাইল)। ২০১০ আদমশুমারি হিসেব অনুযায়ী লোকসংখ্যা ৩০ কোটি ৯৩ লক্ষ ৪৯ হাজার ৬৮৯ জন এবং ২০১৭ সালের আনুমানিক হিসেব মতে এর জনসংখ্যা ৩২ কোটি ৫০ লক্ষ ১২ হাজার।
প্রথম রোগী সনাক্তঃ
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে করোনভাইরাস রোগ প্রথম ধরা পরে ২০২০ সালের ২০ জানুয়ারি। ৩৫ বছর বয়সী একজন ব্যক্তি যিনি ১৫ জানুয়ারি চীনের উহান থেকে আমেরিকা ফিরে এসেছিলেন। পরবর্তীতে ঐ ব্যক্তির শরীরে করোনাভাইরাসের উপস্থিতি নিশ্চিত হয় স্বাস্থ্য বিভাগ। ২৯ জানুয়ারি হোয়াইট হাউস করোনাভাইরাস টাস্ক ফোর্স প্রতিষ্ঠিত হওয়ার দু’দিন পরে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন জনস্বাস্থ্য বিভাগ জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেন।
নিউইয়র্কে প্রথম রোগী সনাক্তঃ
১ মার্চ রোববার যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক সিটিতে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত এক রোগীকে শনাক্ত করা হয়। নিউইয়র্কের গভর্নর অ্যান্ড্রিউ কুমো এক বিবৃতিতে এই তথ্য নিশ্চিত করেন। আক্রান্ত ওই রোগী ছিলেন একজন নারী। তার বয়স ৩০। ইরানে থাকাকালীন তিনি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হন।
করোনায় আক্রান্ত হয়ে প্রথম মৃত্যুঃ
২৯ ফেব্রুয়ারি শনিবার যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন রাজ্যে করোনাভাইরাসে এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়। এই প্রথম দেশটিতে করোনাভাইরাসে কোন ব্যক্তির মৃত্যু হল বলে ২১ ফেব্রুয়ারি কর্তৃপক্ষের বরাত দিয়ে সিএনএন এ তথ্য জানায়। ওয়াশিংটন রাজ্যের গভর্নর জে ইনস্লি এক বিবৃতিতে জানান, করোনাভাইরাসে মৃত্যুর ঘটনা খুবই দুঃখজনক। নাগরিকদের সুস্থ ও নিরাপদ রাখতে আমাদের যথেষ্ট প্রস্তুতি রয়েছে। ঐ দিন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে ৬৭ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ছিলেন।
করোনাভাইরাসে যুক্তরাষ্ট্রে এটি প্রথম মৃত্যু হলেও এর আগে গত ৬ ফেব্রুয়ারি চীনের উহান শহরের জিনয়িনতিয়ান হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় দেশটির একজন নাগরিকের মৃত্যু হয়।
আমেরিকায় এখন পর্যন্ত ৬,৭৭,৫৭০ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। গোটাবিশ্বে এই রোগে আক্রান্তের সংখ্যা মোট ২১,৮১,৩০৮ জন। এর মধ্যে প্রায় ১,৪৫,৪৭০ জনের মৃত্যু হয়েছে। আমেরিকায় মোট মৃতের সংখ্যা ৩৪,৬১৭। নিহতের একটা বড় অংশ ইতালি, স্পেন, ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য এবং চীনের নাগরিক। চীনে এই প্রাণঘাতী ভাইরাসের উত্‍‌সস্থল।
যুক্তরাষ্ট্রে করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ১৩ মার্চ শুক্রবার স্থানীয় সময়ে দুপুরে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেন। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ঘোষণার পাশাপাশি প্রাণঘাতী ভাইরাসটি মোকাবেলায় ৫০ বিলিয়ন ডলার বরাদ্দের ঘোষণা দেন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, এ অর্থ দেশের মানুষ ও প্রদেশের জন্য ব্যয় করা হবে। আমরা সবাই মিলে এই রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করব।’
এর আগে গত ১১ মার্চ ইউরোপ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে সব ধরনের ভ্রমণ নিষিদ্ধ করেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। তখন ট্রাম্প বলেছিলেন, ‘আমাদের দেশের সীমানার মধ্যে নতুন ভাইরাস আক্রান্ত ব্যক্তি যেন প্রবেশ করতে না পারে তা নিশ্চিত করতে এই পদক্ষেপ।’
করোনায় বাংলাদেশি নিহতঃ
বাংলাদেশে এখনও পর্যন্ত ৬০ জন করোনা রোগীর মৃত্যু হলেও আমেরিকায় বসবাসকারী বাংলাদেশিদের মৃত্যুর তালিকা দীর্ঘ হচ্ছে। আমেরিকার স্থানীয় সময় ১৬ এপ্রিল মধ্যরাত পর্যন্ত করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত ১৪৫ জন বাংলাদেশির মৃত্যু হয়েছে। আরও কয়েক’শো প্রবাসী বাংলাদেশির আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া গিয়েছে। করোনা ভাইরাসের কবলে মৃত বাংলাদেশিদের অধিকাংশই নিউইয়র্কের বাসিন্দা ছিলেন।
সর্বশেষ:
সারা পৃথিবীতে ত্রাস হয়ে দাঁড়িয়েছে করোনা ভাইরাস। আমেরিকা, ইতালি, স্পেন, ফ্রান্স, জার্মানি, যুক্তরাজ্য, ইরান করোনার কাছে অসহায় হয়ে পড়েছে। সংক্রমণে সবাইকে ছাপিয়ে গিয়েছে আমেরিকা। প্রতিদিনই লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে আক্রান্ত এবং নিহতের সংখ্যা ৷ শহর থেকে গ্রাম মুক্তি পায়নি বিশ্বের কোণা কোণা ৷
১৬ এপ্রিল বৃহস্পতিবার পর্যন্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৬,৭৭,৪০৭, স্পেন ১,৮৪,৯৪৮, ইতালি ১,৬৮,৯৪১, ফ্রান্স ১৬৫০২৭, জার্মানি ১,৩৭,৬৯৮, যুক্তরাজ্য ১০৩০৯৩ জন। বড় থেকে ছোট, ধনী থেকে দরিদ্র কাউকে খাতির করছেনা করোনা ভাইরাস ৷
যুক্তরাষ্ট্রে এখন পর্যন্ত করোনা ভাইরাসে ৫৭,৫০৮ জন সুস্থ হলেও ৩৪৬১৭ মারা গেছেন। সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়েছেন নিউইয়র্ক সিটিতে। মোট ২,২৬,১৯৮ জন আক্রান্ত এবং ১৬১০৬ জন মারা গেছেন। এরপর রয়েছে নিউ জার্সি, ম্যাসাচুসেটস এবং মিশিগান সিটি। নিউ জার্সিতে মোট ৭৫,৩১৭ জন আক্রান্ত এবং ১৬,১০৬ জন মারা যান। ম্যাসাচুসেটসে আক্রান্ত ৩২,১৮১ জন আক্রান্ত এবং ৩৫১৮ জন মারা যান এবং মিশিগানে ২৯,২৬৩ জন আক্রান্ত এবং ২০৯৩ মারা যান। (১৬ এপ্রিল ২০২০, বিশ্ব হেলথ সংস্থা)।
১৭ এপ্রিল ২০২০
লন্ডন।