প্রচ্ছদ প্রবন্ধ ইসহাক কাজল এবং দ্বীনুজ্জামান চৌধুরী: কাকা ও ভাতিজার গল্প

ইসহাক কাজল এবং দ্বীনুজ্জামান চৌধুরী: কাকা ও ভাতিজার গল্প

0
দ্বীনুজ্জামান চৌধুরী : সাহসী কলামিস্ট, বিশিষ্ট সাংবাদিক জনমত এর সিনিয়র রিপোর্টার ইসহাক কাজল। যাকে কাকা বলে ডাকতাম। তিনি আর নেই। সোমবার বিকেলে লন্ডনের কুইন্স হাসপাতালে ৭২ বছর বয়সে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তিনি দীর্ঘ চার বছরেরও বেশি সময় ধরে ক্যান্সারে ভুগছিলেন।
ইসহাক কাকা আমাকে চিনতেন আমার ছোট বেলা থেকে। আশির দশকে আমার বাবা সিরাজ চৌধুরী’র ‘সাপ্তাহিক সুর’ এর অফিসে যেতেন। সেখানে প্রায়ই সাহিত্য আড্ডা হতো। তারপর বহুবছর পর ২০০০ অথবা ২০০১ সালে তাঁর সাথে আবার দেখা হয় জনমত অফিসে। তিনি আমাকে চিনে ফেললেন। আমি বুটেনে বড় হয়েও বাংলা ভাষায় কথা বলছি, বাংলা পত্রিকাতে লিখছি, এমনকি বাংলা বিভিন্ন কী-বোর্ড লে আউটে টাইপ করছি, এতে তিনি খুবই impressed.
আমিও ছিলাম একটু অন্যরকম; Unpredictable টাইপের। এদেশে Born and brought up বৃটিশ-বাঙালী কি কোন ধরনের ব্যাকিং ছাড়াই বাংলাদেশের হাই-প্রোফাইল নেতাদের সাক্ষাৎকার নেয়ার জন্য লন্ডন থেকে ঢাকায় যায়? আমি গিয়েছি। নিজামীর সাক্ষাৎকার নিতে গিয়ে জামায়াত অফিসে একটু Chaos ও Create করেছি। আমার একটি কবিতা দেখে নিজামীর Assistant এর মাথা খারাপ হয়ে যায়, এবং কবিতাটি নিজামীকে পড়ে শুনানো হয় (while I was smiling outside the room); কবিতাটির নাম ‘রাজাকার পালাবে দেশ ছেড়ে’। সবাই আমার পারফরমেন্সে খুবই impressed; বিশেষ করে ইসহাক কাকা। কেউ যা করতে সক্ষম হয়নি আমি তা করে দেখিয়েছি। সেই অসমাপ্ত সাক্ষাৎকারটি তারা ছেপে দিলেন।
আমাকে একজন সফল কলামিস্ট বানাতে তিনি ওঠে পড়ে লেগে গেলেন। বললেন, তোমাকে অন্তত মাসে জনমত পত্রিকাটির জন্য একটি কলাম লিখতে হবে। শত ব্যস্ততার মাঝে লিখতে হতো, তবে মাসে একটি লেখা সম্ভব হতো না। আমার ছবিসহ জনমত পত্রিকায় কলাম ছাপা হতো। ধন্যবাদ ইসহাক কাকা, নবাব উদ্দিন ভাই, সৈয়দ নাহাস পাশা ভাই ও মোসলেহ আহমেদ ভাই। আমি যা লিখতাম তাই ছাপা হতো। Sky was the limit… তারপর একদিন কাউকে না জানিয়ে ঢাকায় গিয়ে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার একান্ত সাক্ষাৎকার নিয়ে এসে সবাইকে সারপ্রাইজ দিলাম। তারপর লন্ডনে মাওলানা সাঈদীর সাক্ষাৎকার নিলাম; তাও ছেপে দিলেন।
একদিন ইসহাক কাকা ফোন করে জানালেন, আমার লেখা বাংলাদেশের একটি জাতীয় দৈনিকে ছাপা হয়েছে, as far as I can remember আমার মনে হয় আমার এই লেখাটি বাংলাদেশের খ্যাতিমান সাংবাদিক আ.ফ.ম. সাঈদ দাদু সাপ্তাহিক জনমত থেকে বাচাই করেছিলেন। ইসহাক কাকা was so proud of me.
আমি সুযোগ পেলেই যে কাউকে কলমের মাধ্যমে ধোলাই দিতে দ্বিধাবোধ করতাম না। অতীতে আব্বুর কাছে ফোন করে নালিশও করা হয়েছে। ইসহাক কাকা আমাকে নসিহত করতেন, কখনও কোন বিতর্কে যেন না জড়াই। একজন Guardian Angel এর মতো আমাকে Guide করার চেষ্টা করতেন। তিনি বাম রাজনীতি করতেন, ওয়াকার্স্ পার্টি। আমি বাংলাদেশের কোন রাজনৈতিক দলকে পছন্দ করতাম না। একদিন কথা প্রসঙ্গে বললাম, বাংলাদেশে প্রয়োজন, মার্শাল লো। ১০ বছর আর্মির শাসন থাকলে বাংলাদেশ ভালো হয়ে যাবে। তিনি তখন আমাকে বোঝালেন, আর্মির শাসন কখনও কল্যাণ নিয়ে আসেনি।
ইসহাক কাকা ছিলেন Old School; তখন বাসায় টিভি রাখতেন না। বলতেন সব নষ্টের মূল এই টিভি। তিনি একজন রাজনীতিবীদ হলেও সাধারন জীবন যাপন করতেন। পা চাটা পাতি নেতাদের মতো ফুলের মালা নিয়ে এমপি মন্ত্রীর পেছনে ঘুর ঘুর করতেন না। তার পকেটে কোটি কোটি টাকা না হলেও তার চেয়ে অনেক বেশী মূল্যবান একটি জিনিস তাঁর কাছে ছিলো; সততা। তিনি ছিলেন মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের মানুষ। একজন খাঁটি বাঙালী। একজন মুসলিম।একজন ভালো মানুষ। আল্লাহ্ পাক তাঁকে ক্ষমা করুন এবং জান্নাতুল ফিরদাউসে রাখুন। আমিন।
দ্বীনুজ্জামান চৌধুরী
১২ ফেব্রুয়ারী ২০২০