প্রচ্ছদ সাহিত্য নিঃস্বার্থ ভালোবাসার উইল

নিঃস্বার্থ ভালোবাসার উইল

0
মেজবাহ উদদীন: ভালোবাসা আদিম; তাই ভালোবাসা পাওয়া এবং ধরে রাখার ব্যাপারগুলোও আদিম। সেই আদিম ব্যাপারগুলোর একটি হল, ভালোবাসার মানুষটিকে আমরা সব সময় নিজের করে দেখতে চাই; জীবনে সেই সঙ্গে মৃত্যুর পরেও। কোনো প্রেক্ষাপটেই অন্য কারও সঙ্গে তাকে চিন্তা করতে পারি না। তবে আদিম এই প্রেক্ষাপটের বিপরীত এক প্রেক্ষাপটেই এখন মজে আছে অনলাইন পাঠকসমাজ।
এমি কে রোজেনথাল, একজন চৌকস শিশুপাঠ্য লেখক, জীবনীকার এবং পাবলিক স্পিকার যিনি সোমবার শিকাগোয় তার বাড়িতে মারা যান। তার সয়স হয়েছিল ৫১ বছর। তার এজেন্ট জানান, তিনি ওভারিয়ান ক্যান্সারে মারা যান, যেটা তিনি জানতে পারেন ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে। মৃত্যুর আগে ৩ মার্চ এবং ৫ মার্চ টাইমসের অনলাইন স্টাইল বিভাগে একটি আধুনিক ভালোবাসা কলামে রোজেনথালের একটি লেখা প্রকাশিত হয়, যেটা প্রায় সাড়ে চার মিলিয়ন অনলাইন পাঠকদের আকৃষ্ট করেছে।

তিনি লিখেছেন, আমি জেসনের সঙ্গে আরও বেশি সময় থাকতে চাই, আমি আমার সন্তানদের সঙ্গে আরও বেশি সময় থাকতে চাই, আমি আরও সময় চাই বৃহস্পতিবার গ্রীন মিল জাজ ক্লাবে মার্টিন্সের পেয়ালায় চুমুক দিতে, কিন্তু সেটা ঘটতে যাচ্ছে না। সম্ভবত আর মাত্র কয়েক দিনের জন্য এই গ্রহ আমার ঠিকানা। তবে কেন আমি এমন করছি? তিনি আরও লিখেন, আমি একটি নির্দিষ্ট সময়সীমার সম্মুখীন হয়েছি, তুমি আমার স্বামীকে বিয়ে করতে চাইতে পার। অনলাইন পাঠকদের কাছে আর্টিকেলটি দ্রুত ভাইরাল হয়ে যায়; মন্তব্য বিভাগে অনেকে লিখেছে এটা তাদের চোখে পানি নিয়ে এসেছিল, ভালোবাসায়ও যে অংশীদারিত্ব থাকতে পারে তার একটি উদাহরণ প্রদান করেছেন, যেটা তার উদারতাকে প্রতিফলিত করেছে। তার রচনাটি মূলত স্বামীর সঙ্গে কাটানো ২৬ বছরের একটি ডেটিং প্রোফাইল, নিঃস্বার্থ ভালোবাসার একটি উইল হিসেবে অনুরণিত যখন সে তার নিজের মৃত্যুর মুখোমুখি।

আর্টিকেলটিতে তিনি লিখেছেন, আমার এই নিবন্ধনটিতে একজন ভদ্রলোকের সঙ্গে আপনাদের পরিচয় করিয়ে দিতে চাই, জেসন ব্রায়ান রোজেনথাল। তিনি একজন সহজ মানুষ যার প্রেমে পড়াই যায়, আমারও একদিন এমন হয়েছিল’। তার স্বামী পরে এক বিবৃতিতে বলেন, আমি যখন প্রথমবার জন্য তার কথাগুলো পড়ি, আমি মর্মাহত, সামান্য বিস্মিত অবিশ্বাস্য গদ্য এবং অবশ্যই আবেগের পৃথক উপস্থাপন।

এমি ২৯ এপ্রিল, ১৯৬৫ সালের শিকাগো জন্মগ্রহণ করেন। তার স্বামী এবং বাবা ছাড়াও, তিন সন্তান জাস্টিন এবং মাইলস; তার কন্যা প্যারিস; তার বোন, কেটি এফ বৈত্ কফম্যান; এবং তার ভাই, জো-কে রেখে গেছেন। রোজেনথাল একটি স্মৃতিকথা লিখেছেন, আমি শুধু অক্ষর এবং ভাষায় প্রকাশের অযোগ্য একটি স্নেহের সঙ্গে জন্মগ্রহণ করি।

তার দীর্ঘদিনের সাহিত্য এজেন্ট এমি রেনার্ট জানান, ‘তিনি ছিলেন অনেকটা জীবন-সত্যায়ন এবং প্রেম-সত্যায়ন ব্যক্তি,”লেখক জন গ্রিন টুইট করেছেন। তিনি একজন উজ্জ্বল লেখক এবং সমানভাবে একজন ভালো বন্ধু ছিলেন। ২০০৫ সাল থেকে এমি কে রোজেনথাল ২৮টি শিশুদের ছবি বই লিখেছেন। তার এজেন্ট বলেন, রোজেনথাল তার মৃত্যুর আগে আরও সাতটি ছবি বই তার মেয়ের সহযোগিতায় সম্পন্ন করেছেন। তিনি একবার বলেছিলেন সাহিত্যে তার প্রিয় লাইন- ‘আওয়ার টাউন’,নাটকের লাইন-‘কোনো মানুষ কখনও জীবন উপলব্ধি করতে পারে না, যতক্ষণ সে সেখানে বাস করে?’

সূত্র : দি নিউইয়র্ক টাইমস এবং ওয়াশিংটন পোস্ট অনলাইন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here