প্রচ্ছদ বিনোদন জীবনের গাড়ি ছেড়ে যাওয়া ‘সঞ্জীব চৌধুরী’র মৃত্যুবার্ষিকী আজ

জীবনের গাড়ি ছেড়ে যাওয়া ‘সঞ্জীব চৌধুরী’র মৃত্যুবার্ষিকী আজ

0
আনিসুর সুমন:  আজ ১৯ নভেম্বর জনপ্রিয় সঙ্গীত শিল্পী সঞ্জীব চৌধুরীর ৯ম মৃত্যুবার্ষিকী। ২০০৭ সালের আজকের দিনে মাত্র ৪২ বছর বয়সে মারা যান এই প্রখ্যাত ব্যক্তিত্ব। একাধারে তিনি ছিলেন কবি, সাংবাদিক, গীতিকার, সুরকার, গায়ক এবং সংগঠক। দলছুট স্রষ্টা হিসেবে রয়েছে তার সবচেয়ে জনপ্রিয় পরিচয়।
১৯৬৪ সালের ২৫ ডিসেম্বর হবিগঞ্জের মাকালকান্দি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। তাঁর জন্ম হবিগঞ্জে হলেও তাঁর মূল বাড়ি সিলেট জেলার বিশ্বনাথ থানার দশঘর গ্রামে। শরীরে জমিদার বংশের রক্ত থাকার পরও সঞ্জীব চৌধুরী একজন সাধারণ মানুষের মতোই নিজের কর্ম ও সাধনায় নিজেকে বিলিয়েছিলেন।তাঁর বাবার নাম গোপাল চৌধুরী এবং মা প্রভাষিনী চৌধুরী।
সঞ্জীব চৌধুরী ছিলেন অনেক মেধাবী ছাত্র। হবিগঞ্জ সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশুনা করে নবম শ্রেণীতে এসে ভর্তি হন ঢাকার বকশী বাজার নবকুমার ইন্সটিটিউটে । এখান থেকেই ১৯৭৮ সালে মাধ্যমিক পরীক্ষায় মেধা তালিকায় ১২তম স্থান অর্জন করেন। ১৯৮০ সালে তিনি ঢাকা কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেও স্থান করে নেন মেধা তালিকায়। এর পর তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন এবং ‘গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা’ বিষয়ে অনার্স ও মাস্টার্স সম্পন্ন করেন।
ঢাকা কলেজে পড়ায় সময় তিনি বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের সাথে যুক্ত হন। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় আরও গভীর ভাবে জড়িয়ে পরেন এবং হয়ে উঠেন ছাত্র ইউনিয়নের জন্য নিবেদিত প্রাণ।তিনি এ সংগঠনের সাংস্কৃতিক সম্পাদক ছিলেন।
পড়াশুনা শেষ করে আশির দশকে সাংবাদিকতা শুরু করেন সঞ্জীব চৌধুরী। আজকের কাগজ, ভোরের কাগজ ও যায়যায়দিনসহ বিভিন্ন দৈনিক ও সাপ্তাহিক পত্রিকায় কাজ করেছেন তিনি।সর্বশেষ কাজ করেছিলেন যায়যায়দিনের ফিচার এডিটর হিসেবে। তার হাত ধরেই মূলত দৈনিক পত্রিকায় ফিচার বিভাগের শুরু হয়।
এরপর টানা সঙ্গীত জগতে। আলোচিত অ্যালবামগুলোর মধ্যে রয়েছে আহ্ (১৯৯৭), হৃদয়পুর (২০০০), আকাশচুরি (২০০২), জোছনাবিহার (২০০৭), স্বপ্নবাজী। এদিকে জনপ্রিয় গাওয়া সঞ্জীব চৌধুরীর গানের মধ্যে রয়েছে , ‘আমি তোমাকেই বলে দেবো’, ‘আমি ফিরে পেতে চাই’, ‘গাছ’, ‘নৌকা ভ্রমন’, ‘সাদা ময়লা রঙ্গিলা’, ‘কালা পাখি’, ‘কোথাও বাশিঁ’, ‘দিন সারা দিন’, ‘তোমার ভাজঁ খোল আনন্দ দেখাও’, ‘গাড়ি চলে না’, ‘বায়োস্কোপ, ‘অপেক্ষা’, ‘সমুদ্র সন্তান, কিংবা ‘সানগ্লাস’র মতো অসংখ্য জনপ্রিয় গান।
বাংলা গানের এই মহান প্রবাদ পুরুষের সহশিল্পী, অনুসারী, ভক্ত, কনিষ্ঠদের মাঝে দেখা গেছে ভালবাসা মেশানো প্রতিক্রিয়া আর বিনম্র শ্রদ্ধা।
সঞ্জীব চৌধুরীর অন্যতম কাছের মানুষ সঙ্গীত শিল্পী বাপ্পা মজুমদার বলছেন, পাগল রাগ করে চলে গেল …ঊনিশ নভেম্বর .. রাত বারোটা দশ …সঞ্জীব দা চলে গেলেন ….দাদা গো …. মিস ইউ দাদা ….. !!!
গীতিকার, সাংবাদিক ইশতিয়াক আহমেদ তার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে লিখেছেন, ‘বাংলা সিনেমা আমাদেরকে জানিয়েছে, চৌধুরি নামটা একটু কাটখোট্টা হয়। ধারালো ছুরির মতো তাদের কথা, আমাদের হৃদয় কেটে ফেলে নির্দ্ধিধায়। বাংলা গান আমাদের শিখিয়েছে, চৌধুরি নামটা পৃথিবীর সবচেয়ে কোমলও হয়। সদ্য মৌচাক ভাঙা মধুর মতো তাদের কথা, আমাদের হৃদয় ভিজিয়ে যায় অবিরাম।প্রিয় সঞ্জীব চৌধুরী, আপনার মৃত্যু আমাদের সময়ে অনেক বড় ক্ষতির একটা’।
সঞ্জীব চৌধুরীর প্রতি ভালবাসায় দেশে প্রথমবারের মতো তাকে নিয়ে গান লিখেন ইশতিয়াক আহমেদ। গানটির শিরোনামও দেয়া হয়েছে ‌‘সঞ্জীব চৌধুরী’। গানটিতে কণ্ঠ দিয়েছেন লুৎফর হাসান।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here