প্রচ্ছদ বৃটেন মিয়ানমারে হত্যাযজ্ঞ : একটি ভয়ঙ্কর মাত্রা

মিয়ানমারে হত্যাযজ্ঞ : একটি ভয়ঙ্কর মাত্রা

0
গার্ডিয়ানের সম্পাদকীয় অভিমত, ভাষান্তর : মীযানুল করীম
রোহিঙ্গারা একটি মুসলিম জনগোষ্ঠী, যারা বৌদ্ধ অধ্যুষিত মিয়ানমারের উত্তর-পশ্চিম অংশে বাস করে। এর সীমান্তে মুসলিমপ্রধান বাংলাদেশ। রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে গণ্য করা হয় মুসলমান হিসেবে আর বাংলাদেশে তারা বিদেশী। এই দুই দেশের কেউ তাদের নিজেদের লোক বলে দাবি করে না; এমন কি চায় না ঠাঁই দিতে। উভয় রাষ্ট্রই তাদের নাগরিকত্ব লাভের অনুমতি দেবে না। অপর দিকে, তারা অন্তত শত শত বছর ধরে বার্মায় (মিয়ানমার) বাস করে আসছে। এখন মিয়ানমারের সেনাবাহিনী রোহিঙ্গাদের অস্তিত্ব পর্যন্ত সহ্য করছে না।
গত কয়েক সপ্তাহে তাদের গ্রামগুলোতে প্রায় গণহত্যাতুল্য ঘটনা অনেক বেড়ে গেছে। ফলে হাজার হাজার রোহিঙ্গা সুরক্ষিত সীমান্ত পাড়ি দিয়ে পালাতে চাচ্ছে, অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ সত্ত্বেও। যেসব এলাকায় সশস্ত্র প্রতিরোধ খুব জোরদার, সেখানকার জনগণকে খাদ্য থেকে বঞ্চিত করার মাধ্যমে কাতর করে সেনাবাহিনী তাড়াতে চায় বলেই প্রতীয়মান হচ্ছে। এতে সীমান্তের ওপারে শরণার্থীদের নজিরবিহীন ঢল নেমেছে। দুর্গত এলাকায় খাদ্য, পানি কিংবা ওষুধ পাঠাতে দিচ্ছে না মিয়ানমার সেনাবাহিনী। ফলে আনুমানিক আড়াই লাখ মানুষ নিয়মিত খাদ্য পাচ্ছে না।
শরণার্থীরা প্রাণে বেঁচে বেরিয়ে আসতে পারলেও তাদের ভাগ্যে প্রায় কিছুই নেই বলা চলে। বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ এটা স্বীকার করতে একেবারেই অনাগ্রহী যে, রোহিঙ্গারা নির্যাতন থেকে বাঁচতে পালিয়ে আসছে। অবশ্য স্থানীয় জনগণ রোহিঙ্গাদের ব্যাপারে মহৎ বদান্যতার পরিচয় দিয়েছে।
বছরের পর বছর ধরে মিয়ানমার সরকারের বিভিন্ন বাহিনী রোহিঙ্গাদের গ্রামগুলোতে হামলা করেছে তাদের হত্যা করা কিংবা তাড়িয়ে দেয়ার জন্য। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল মিয়ানমার সরকারকে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে অভিযুক্ত করেছে। অশিন বিরাথু হচ্ছেন মিয়ানমারের সবচেয়ে প্রভাবশালী বৌদ্ধ ধর্ম প্রচারকদের একজন। তিনি মশার প্রতি দয়া এবং মুসলমানদের জন্য মৃত্যুর কথা প্রচার করছেন। কিছু বক্তব্যের জন্য তাকে জেল খাটতে হয়েছে। তবে তিনি এখন আগের চেয়ে জনপ্রিয় এবং ব্যাপকভাবে মনে করা হচ্ছে, তার পেছনে আছে সেনাবাহিনীর সমর্থন। তারা বহু বছর দেশটি শাসন করেছে এবং নেপথ্যে আজো বেশ বড় একটি শক্তি হিসেবে তৎপর।
নির্যাতনের প্রতিক্রিয়া, সশস্ত্র প্রতিরোধ, এটা আগে থেকেই ধারণা করা যায়। আবার এর ফলে আরো নির্যাতন ও নিষ্ঠুরতা ঘটছে। এমন ধারাবাহিক সহিংসতা ও প্রতিশোধের ব্যাপারে গৌতম বুদ্ধের বাণী ছিল। তবে মিয়ানমারের বৌদ্ধরা দোজখের প্রহরীদের মতো শৃঙ্খলিত করে শাস্তি দিচ্ছে বলে প্রতীয়মান হয়। এসব কাহিনী মর্মন্তুদ এবং বিশ্ববিবেকের নিদারুণ অবমাননা। এই পরিস্থিতির অবসান হচ্ছে না, তা প্রায় নিশ্চিত। যেন গোটা রাখাইন স্টেটকে বাসিন্দাশূন্য এবং প্রতিরোধকে চূড়ান্তভাবে নির্মূল করার জন্য কোনো পাশবিক নির্যাতনই যথেষ্ট নয়।
অপর দিকে, সশস্ত্র প্রতিরোধ চূড়ান্ত বিজয় লাভের আশা করতে পারে না। তবে এই সঙ্ঘাতের পরিধি বাড়বে বলে ধারণা করা যায় এবং এটা এমন একটি ধর্মীয় সঙ্ঘাত হিসেবে উপস্থাপিত হবে যেখানে মুসলমানরা তাদের ধর্মবিশ্বাসের কারণে নির্যাতিত হচ্ছে। এটা অন্তত অর্ধসত্য। এর ধ্বংসাত্মক দিক থাকলেও এটা বক্তব্য হিসেবে শক্তিশালী। এর মধ্য দিয়ে মিয়ানমার সে দেশগুলোর দীর্ঘ তালিকায় যোগ হলো যেখানে ইসলাম নির্যাতিত ও বঞ্চিত মানুষের ধর্ম হিসেবে গণ্য হচ্ছে। এভাবে মুসলমানদের সহিংস ও অসহিষ্ণু প্রতিশোধের যৌক্তিকতাও তুলে ধরা হচ্ছে। থাইল্যান্ড থেকে ফিলিপাইন পর্যন্ত দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অনেক অঞ্চলে ইতোমধ্যে এ ধরনের বিদ্রোহ শুরু হয়েছে। নৃতাত্ত্বিক বিভাজন ও দ্বন্দ্ব-সঙ্ঘাত থেকে এর উৎপত্তি।
মিয়ানমারের ঘটনায় অং সান সু চির সম্পৃক্ততার ভয়াবহ বৈপরীত্য বিদ্যমান। তিনি মিয়ানমারে বিশ্বজনীন মানবাধিকারের বাণী বয়ে এনেছিলেন বলে মনে করা হয়। পুরনো দুনিয়ার নিষ্ঠুরতার তিনি ঊর্ধ্বে থাকবেন কিংবা এটা সীমিত করে দেবেন বলেই প্রত্যাশা করা হয়েছিল। এই নোবেল বিজয়ীকে কয়েক দশক যাবৎ মানবাধিকারের নীতিনিষ্ঠ ও অটল প্রবক্তা হিসেবে মনে করা হয়েছে। এখন তিনি একটি অত্যন্ত জটিল তথা ক্রমবর্ধমান সমস্যা সৃষ্টিকারী সরকারের অনুভূতিহীন নামেমাত্র প্রধান হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন।

কৃতজ্ঞতায়:নয়া দিগন্ত

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here