প্রচ্ছদ সফল নারী কাজের চাপ প্রশ্রয় দিলেই সাফল্য আসে : চন্দা কোচার

কাজের চাপ প্রশ্রয় দিলেই সাফল্য আসে : চন্দা কোচার

0
সাব্বিন হাসান: চন্দা কোচার। ভারতের কর্পোরেট সংস্কৃতিতে নারী ক্ষমতায়নের অন্যতম প্রতীক এখন চন্দা। বিখ্যাত ফরচুন ম্যাগাজিনের জরিপে ভারতের ক্ষমতাবান নারী ব্যবসায়ীদের তালিকায় আছেন প্রথম স্থানে। একটানা তিনবার তিনি এ অবস্থানে আছেন। ক্যারিয়ারে আইসিআইসিআই ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক।
বর্তমানে ভারতের অন্যতম বেসরকারি ব্যাংক হচ্ছে দ্য ইন্ডাস্ট্রিয়াল ক্রেডিট অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট কর্পোরেশন অব ইন্ডিয়া (আইসিআইসিআই) ব্যাংক লিমিটেড। এটি ভারতের দ্বিতীয় বৃহত্তম ব্যাংক। আর এ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন চন্দা কোচার। চন্দা নিজের নেতৃত্ব গুণে ব্যাংকের আন্তর্জাতিক ব্যবসা কৌশলকে দারুণভাবে গুছিয়েছেন। এ ছাড়াও ব্যাংকের কর্মীদের মধ্যে চন্দা নিজের নেতৃত্বকে প্রতিষ্ঠা করেছেন।
একবার নয়, দুবার নয়- পরপর তিনবার বিখ্যাত ব্যবসা ম্যাগাজিন ফরচুনের শীর্ষ কর্পোরেট এবং ক্ষমতাবান নারীর স্থান ধরে রাখাটা মোটেও সহজ নয়। ব্যবসা সুসম্প্রসারণ, সুদীর্ঘ বিনিয়োগ কৌশল আর নেতৃত্ব গুণই এ সাফল্যের অন্যতম কারণ। কর্পোরেট জীবনের সব ক্ষেত্রেই সফল এ নারী বিভিন্ন সাক্ষাৎকারে দায়িত্ব-কৌশলের প্রতি গুরুত্ব দিয়েছেন। নিজের যোগত্যা আর ব্যবসা সফলে বিশ্লেষণ ক্ষমতাও অনেক বড় একটি গুণ বলে তিনি মনে করেন। প্রসঙ্গত, ১৯৫৫ সালে প্রতিষ্ঠিত ব্যাংকটির কর্পোরেট খাতের প্রধান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন তিনি। চন্দার জন্ম ১৯৬১ সালে রাজস্থানের যোধাপুরে। জয় হিন্দ কলেজ থেকে স্নাতক। এরপর জামনালাল বাজাজ ইন্সটিটিউট অব ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি। পড়াশোনায় চন্দা বরাবরই একটু বেশি আগ্রহী। পড়াশোনায় ভালো সাফল্য দেখানোয় ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ স্বর্ণপদক অর্জন করেন তিনি।
১৯৮৪ সালে শিক্ষানবিস হিসেবে যোগ দেন আইসিআইসিআই ব্যাংকে। ব্যাংকিং খাতের বিভিন্ন ধাপে যোগ্যতার মাধ্যমে বর্তমানে ব্যাংকের শীর্ষ পদে উঠে এসেছেন। ২০০৫ সালে বিখ্যাত সাময়িকী ফরচুনে ব্যবসা খাতে প্রভাবশালী নারীদের তালিকায় স্থান, এশিয়ান বিজনেস লিডারশিপ ফোরাম পুরস্কার ছাড়াও পেশাগত জীবনে একাধিক পুরস্কার অর্জন করেন। বিখ্যাত সাময়িকী ফোর্বসের প্রভাবশালী শীর্ষ একশ’ নারীর তালিকায় চন্দার নাম ২০০৯ সাল থেকেই উচ্চারিত হয়ে আসছে।
ভারতের মুম্বাই শহরে থাকেন চন্দা। স্বামী দীপক কোচার একজন সফল ব্যবসা উদ্যোক্তা। দাম্পত্য জীবনে দু’সন্তানের মা। তাদের এক ছেলে ও আরতী নামের এক মেয়ে রয়েছে। তবে আজকের চন্দার এ সাফল্যের পেছনে তার মায়ের অবদান সবচেয়ে বেশি বলে মনে করেন তিনি। মাত্র ১৩ বছর বয়সে হঠাৎ করেই হার্ট অ্যাটাকে মারা যান চন্দার বাবা। দুই বোন আর এক ভাইয়ের সংসারে মা তখন কোনো উপার্জন করেন না। রাতারাতি তার কাঁধে তিন সন্তানের দায়িত্ব এসে পড়ে। একজন নারী হয়েও তার মা সর্বোত্তমভাবে দায়িত্ব পালনে দৃঢ় প্রত্যয়ী ছিলেন বলেই জানান চন্দা। এরপর মা ডিজাইন এবং টেক্সটাইলে প্রশিক্ষণ নেন। একটি ছোট ফার্মে চাকরি নেন। আর খুব দ্রুতই তিনি প্রতিষ্ঠানের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠেন।
এক হাতে পুরো পরিবারের দায়িত্ব নেয়া অবশ্যই চ্যালেঞ্জিং ছিল। কিন্তু তিনি কখনোই আমাদের তা বুঝতে দেননি। আমাদের কলেজে ওঠা অবধি তিনি কঠিন পরিশ্রম করে গেছেন। পরে বুঝতে পেরেছিলাম বাবা চলে গেলেও মায়ের এমন আত্মনির্ভরতা এবং আত্মবিশ্বাসের মতো বড় সম্পদ ছিল আমাদের পরিবারে। কথাগুলো জানিয়েছেন চন্দা নিজেই।
ব্যক্তি জীবনে চন্দা ভাগ্য বিশ্বাস করেন। আরও বিশ্বাস করেন, কঠোর পরিশ্রম এবং অধ্যবসায় জীবনে জন্য গুরুত্বপূর্ণ। স্বপ্ন আসলে তাই যা তুমি অর্জন করতে চাও, রচনা করতে পারো নিজের মতো করে। যেহেতু এগিয়ে যেতে হবে, তাই সফলতার জন্য পা বাড়াতে হবে। দেখবে, এক সময় সফল হবেই। আকাশ ছোঁয়ার লক্ষ্য স্থির কর। কিন্তু ধীরে ধীরে চলো। একাকী চলার পথে প্রতিটি পদক্ষেপ উপভোগ কর। যারা ছোট ছোট পদক্ষেপে এগিয়ে যায়, তারা সফলতার সঙ্গে যাত্রা শেষ করে। সামনে এগিয়ে যেতে কঠিন কিছু সিদ্ধান্ত নিতে হয়। যা অন্যরা অবজ্ঞা করতে পারে। নিজের যা বিশ্বাস সেই সিদ্ধান্তে অনঢ় থাকতে সাহস রাখতে হবে। কাউকে দোষ দেয়ার আগে নিশ্চিত হও যে নিজের অবস্থান সঠিক কি-না। নিজের চলার পথ থেকে সন্দেহকে দূরে সরিয়ে রাখতে হবে।
মনে দৃঢ়তা থাকলে সবই অর্জন করা যায়। লক্ষ্য অর্জনে কখনও সততা ও ন্যায়ের সঙ্গে আপস টেকসই হয় না। স্বপ্ন পূরণে কোনো কিছুতে ছাড় নয়। নিজেকে ফিরে পেতে কাজের চাপ প্রশ্রয় না দিলে তা জীবনে কোনো ইস্যু হতে পারবে না। ভালো ও খারাপ সময় দুটোই সমানভাবে জীবনের অংশ হতে পারে। শিখতে হবে এই দুই সময়ে কীভাবে নিজেকে সঠিকভাবে পরিচালিত করতে হয়। নিজের জন্য অনেক সুযোগ তৈরি করতে হবে। আর প্রতিটি সুযোগ থেকে শিক্ষা নিতে হবে। আর তা নিজেকেই মোকাবিলা করতে হবে। এমনটাই বিশ্বাস করেন চন্দা কোচার।
কৃতজ্ঞতায়: যুগান্তর

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here